Saturday, May 7, 2016

আনু খালা স্মরনে

আকস্মিকভাবেই তাঁর মৃত্যু হলো। দুমাসের মধ্যেই ক্যানসার তাঁকে গ্রাস করে নিলো।

কিছুটা যেন জোর করেই চারন করছি তাঁর স্মৃতি। কেননা একটা অবিশ্বাস-ভাব মনের মধ্যে লেগেই আছে। বার বার নিজেকে মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে মানুষটি নেই - আর দেখা যাবে না তাঁকে এ সংসারে।

অদ্ভুত মায়াময় মহিয়সী ছিলেন তিনি। তাঁর প্রতি আমার সশ্রদ্ধ ভালোবাসা ছিল। তাঁর কন্ঠে ভরা থাকতো মাতৃসুলভ দাবী, আবদার। সেই সচরাচর উচ্চস্বরে কথা-বলা মানুষটিকে দুদিন আগে দেখলাম ব্যথায় ম্রিয়মান - অসহায় এবং জেদী।জেদী বলেই মনে হয়েছিল অবশ্যই ফিরে আসবেন এই যুদ্ধে জয়ী হয়ে। ম্রিয়মান - সে কেবলই সাময়িক। বুঝিনি এ যুদ্ধ - জয়ের যুদ্ধ নয় - আমরা এতটাই অসহায়, এতটাই তুচ্ছ, এতটাই ক্ষুদ্র - করুনাময়ের এ মহাবিশ্বে।

তাঁর সাথে আমার পরিচয় ৯২ সালে বন্ধুর মা হিসেবে। তাঁর ছেলেমেয়ের প্রতি তাঁর ছিল অপরিসীম মমতা। এই মমতা চোখে পড়ার মত, চেয়ে থাকার মত। আমি যতই তাঁর কাছের হয়েছি, ততই মুগ্ধ হয়েছি। মনে হত হয়ত আমরাও হব এমনই মমতাময় আমাদের সন্তানের প্রতি। যেন তিনি ছিলেন তেমনই একটা অনুসরনীয় দৃষ্টান্ত। প্রতিবার সাক্ষাতে পেয়েছি তারই প্রতিচ্ছায়া। নিজের অজান্তেই ভাগ বসিয়েছি সেই অপরিসীম মমতায়। অগনিত সু-স্মৃতি যেন বার বার ভুল করিয়ে দেয় যে তিনি হয়তো এখনো আছেন আশে পাশেই।

কাছের মানুষদের প্রতি তিনি ছিলেন প্রচন্ড  উদার। হোক সে আপ্যায়নে, হোক সে সম্বোধনে, হোক সে উপহারে আর হোক সে খোশ-গল্পে।অবাক হয়েছি সেই উদারতার উন্মাদ-মাত্রায়। সবসময় আগলে রাখতেন তাঁর কাছের মানুষ গুলোকে। তাদের কারো প্রতি মনঃক্ষুণ্ণ হলে, অথবা বিতশ্রদ্ধ হলে রক্ষকের বেশে দাঁড়িয়ে যেতেন - ভুল বোঝানোর রাঙতায় মুড়িয়ে দিতেন তাঁর কথা গুলোকে।

সদা হাস্যময় একটি মুখ ছিল তাঁর। হাসি কৌতুক করতেন, হাসি কৌতুক বুঝতেন। সহজ সরল এই মানুষটির সাথে তাই আড্ডাসুলভ কৌতুক করে ভালো লাগতো। অনেক দুরের একজন মানুষ হলেও প্রতিবার সাক্ষাতে 'কেমন আছো, আব্বু' বলে মুহুর্তে ঘুচিয়ে দিতেন সেই দুরত্বকে। তারপর অতি সাভাবিক আলাপ-আড্ডায় আপন করে নিতেন দুরের প্রতিটি মানুষকে।এই সাবলিল সময়গুলো মনে হলে কষ্ট জাগে এই যবনিকায়।

এই মমতাময় মানুষটি আর ফিরবেন না। আমাদেরকে ডাকবেন না কাছে। কাছের মানুষ আর দুরের মানুষ - সব আপন মানুষগুলোকে ফেলে চলে গেছেন করুনাময়ের কাছে। আর আমরা তাই তাঁরই কাছে আবদার করি যেন তারও বেশী মমতায় জড়িয়ে রাখেন তাঁর পরবর্তী জীবনকে।

                                                                                                         অস্টিন
                                                                                                         ২১-শে এপ্রিল, ২০১৬

No comments:

Post a Comment