Tuesday, March 25, 2014

কাব্যিক ঘটনার জন্য কাব্যিক চিন্তা

আমার কন্যার জন্মদিনের রাতে তার নানা ইন্তেকাল করেন। ব্যপারটি আমাকে কিছুটা কাব্যিকভাবেই আলোড়িত করেছে। বাঙ্গালীর স্বামী-স্ত্রী-বাবা-মা-ভাই-বোন-সন্তান নিয়ে যদি পরিবারের নিওক্লিয়াস চিন্তা করা হয়, তাহলে এই ঘটনায় আমাদের নিওক্নলিয়াসে নতুন প্রজন্মের প্রথম জন্মদিন আর পূর্ববর্তী প্রজন্মের প্রথম মৃত্যুদিন একই দিনে রচিত হলো। কাকতালীয় মনে হলেও, ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে করুনাময়ের নির্দেশের যেন একটা ইঙ্গিত আছে - যেন আমার পরিবারকে বলতে চাইছেন - প্রতিটি জন্মের সাথে মৃত্যুর কথা চিন্তা করবে - যদিও ধর্ম বলে সবসময়ই মৃত্যুর কথা ভাবতে।

আমি প্রায়ই মৃত্যু নিয়ে ভাবি। জন্মদিনগুলো যেন আরো বেশী করে মনে করিয়ে দেয় - অনেক কাজ বাকী - কবে শেষ করবো? আমার শ্বশুর উনার এলাকার জন্য চারবার পৌরসভার চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও হয়তো চার দশকের বেশীই কাজ করে গেছেন। আর তাই এলাকার মানুষের বিশেষ শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন। আমার দৃষ্টিতে তিনি আমাদের অনেকের তুলনায়ই তার অর্জন অনেক, সাফল্য অনেক, অনেক কিছু করে যেতে পেরেছেন ৮০/৮২ বছরের এই সুদীর্ঘ পথচলায়। জীবনের বিভিন্ন প্রশাখায় - সমাজকল্যান, রাজনীতি, ধর্ম-কর্ম এবং পরিবার - সবগুলো দিকেই যেন পুর্নতা ছিল। আর তাই কাকতালীয় এই ইঙ্গিতকে আমি অনুপ্রেরনার উৎস হিসেবে দেখছি। 

মানুষ অন্যান্য সৃষ্ট প্রানী থেকে অনেক কারনেই ভিন্ন। প্রতিটি মানুষের জীবনের একটা গুরুত্ব আছে। হয়তো যে গুরুত্ব প্রকাশের জন্য জন্ম, তার পুরোটা আমরা এক জীবনে পুর্ন করতে পারিনা - কিন্তু হয়তো জানতে পারলে বা চেষ্টা করলে পারতাম। আমি কি জানি জীবনের কোন শাখায় গেলে আমি সেই পুর্নতা পাবো? সমাজ-কল্যান? রাজনীতি? ধর্ম-কর্ম? পরিবার-গৃহ-সন্তান-পরিচালনা? সংস্কৃতি-চর্চ্চা? বিজ্ঞান? শিক্ষা?  নাকি না-জানা কোনো শাখা? আর সেটা যদি না-ই জানলাম, তাহলে আমার প্রচেষ্টা হওয়া উচিত কোন শাখায়? নাকি সব শাখায়?

প্রবাস জীবনের সীমাবদ্ধতায় আমি তাই অনেক কিছু করেও কিছু না করতে পারার অতৃপ্ততায় ভুগি। আজকাল ২৪ ঘন্টা খুব কম মনে হয়। বিগত কিছুদিন সবকিছু করতে চাওয়ার চাহিদা আমাকে যেন ক্লান্ত করে ফেলেছিলো। তার উপরে রয়েছে আমাদের আয়ুর অনিশ্চিয়তা - এখনই যেন সবকিছু চেষ্টা করার তাগিদ। আমার শ্বশুরের মত ৮০/৮২ বছরের নিশ্চয়তা কে দেবে? জীবনে বিভিন্ন শাখায় সেই সমপরিমান পুর্নতার নিশ্চয়তা কে দেবে?
নাহ - আপাতঃ দৃষ্টিতে মনে হলেও ব্যাপারটা কোনোভাবেই অকল্যানময় হতে পারে না। জন্ম-মৃত্যুর এই কাবিক নির্দেশ যেন আমাদেরকে দেয়া করুনাময়েরই তাগিদ - পবিত্র, কল্যানময় এবং শুভ।
(দোহা এয়ারপোর্ট, এপ্রিল ২৩, ২০১৩)

অরিজিনাল পোস্টঃ https://www.facebook.com/notes/galib-hassan/কাব্যিক-ঘটনার-জন্য-কাব্যিক-চিন্তা/10151896421164616

No comments:

Post a Comment